ডেটা সায়েন্সে প্রকল্প সম্পাদন করতে হলে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রতিটি ধাপের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এবং ধাপগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করতে হয়। নিচে ডেটা সায়েন্সের প্রাথমিক ধাপগুলো এবং সেগুলোর বিশদ আলোচনা দেওয়া হলো:
১. সমস্যা নির্ধারণ এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বুঝা
প্রথম ধাপে সমস্যাটি কী এবং কেন এটি সমাধান করা দরকার তা বোঝা জরুরি। এটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে সঠিক ডেটা নির্বাচন ও মডেল তৈরি সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি লক্ষ্য হয় গ্রাহকদের চাহিদা পূর্বাভাস করা, তবে এর উপর ভিত্তি করে ডেটা ও মডেল নির্বাচন করতে হবে।
২. ডেটা সংগ্রহ (Data Collection)
সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে এমন ডেটা সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডেটা সংগ্রহের সময় অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত উভয় ধরনের উৎসকে বিবেচনা করা হয়। ডেটা সংগ্রহের উৎস হতে পারে কোম্পানির নিজস্ব ডেটাবেজ, ওয়েব স্ক্র্যাপিং, সেন্সর ডেটা, সার্ভে ইত্যাদি।
৩. ডেটা এক্সপ্লোরেশন এবং বিশ্লেষণ (Data Exploration and Analysis)
ডেটা সংগ্রহের পর সেটিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। ডেটাতে কি কি ধরনের তথ্য আছে, তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন তা বোঝা এই ধাপের কাজ। বিভিন্ন টুলস (যেমনঃ Python, R) ব্যবহার করে ডেটা এক্সপ্লোরেশন করা হয় এবং বিভিন্ন ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে ডেটার প্যাটার্ন ও সম্পর্কগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৪. ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিষ্কারকরণ (Data Cleaning and Preprocessing)
ডেটা সায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হলো ডেটা পরিষ্কারকরণ। সাধারণত ডেটাতে অনেক সময় মিসিং ভ্যালু, ডুপ্লিকেট এন্ট্রি, আউটলাইয়ার থাকে যা মডেল তৈরির ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এই ধাপে সেই সমস্যাগুলি সমাধান করা হয়। এছাড়া ডেটার স্কেলিং, ইম্পুটেশন, ক্যাটেগোরিক্যাল ডেটাকে এনকোড করা ইত্যাদি কাজ করা হয়।
৫. ফিচার ইঞ্জিনিয়ারিং (Feature Engineering)
ফিচার ইঞ্জিনিয়ারিং হল সেই ধাপ যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার বা বৈশিষ্ট্যগুলো নির্বাচন করা হয়। কখনো কখনো নতুন ফিচার তৈরি করেও মডেলের কার্যক্ষমতা বাড়ানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ডেটাসেটে একটি তারিখ ফিচার থাকে, তাহলে এই তারিখ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্য যেমন "মাস", "দিন" বা "সপ্তাহের দিন" বের করা যেতে পারে যা মডেলের পারফরম্যান্সে সহায়ক হতে পারে।
৬. মডেল নির্বাচন এবং প্রশিক্ষণ (Model Selection and Training)
এই ধাপে উপযুক্ত মেশিন লার্নিং মডেল নির্বাচন করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন মডেল যেমনঃ লিনিয়ার রিগ্রেশন, লজিস্টিক রিগ্রেশন, ডিসিশন ট্রি, র্যান্ডম ফরেস্ট, নিউরাল নেটওয়ার্ক ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। মডেলটি ডেটার ওপর প্রশিক্ষিত করা হয় যাতে সেটি সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
৭. মডেল মূল্যায়ন (Model Evaluation)
মডেল প্রশিক্ষণের পর মডেলের কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। বিভিন্ন মেট্রিক্স যেমনঃ একুরেসি, প্রিসিশন, রিকল, F1 স্কোর, RMSE ইত্যাদি ব্যবহার করে মডেলের পারফরম্যান্স নির্ধারণ করা হয়। মডেল যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল দিতে না পারে তবে মডেল টিউনিং বা ভিন্ন মডেল নির্বাচন করতে হয়।
৮. মডেল অপ্টিমাইজেশন এবং টিউনিং (Model Optimization and Tuning)
মডেলের কার্যক্ষমতা আরও উন্নত করার জন্য হাইপারপ্যারামিটার টিউনিং করা হয়। বিভিন্ন প্যারামিটার যেমনঃ লার্নিং রেট, মডেলের জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করে মডেলের পারফরম্যান্স উন্নত করা হয়। সাধারণত গ্রিড সার্চ বা র্যান্ডম সার্চ টেকনিকের মাধ্যমে প্যারামিটার টিউন করা হয়।
৯. মডেল স্থাপনা (Model Deployment)
মডেল তৈরির পর সেটিকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়। মডেল স্থাপন মানে এটি এমনভাবে স্থাপন করা যাতে ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত API বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে মডেলকে স্থাপন করা হয়।
১০. মডেল মনিটরিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ (Model Monitoring and Maintenance)
মডেল ব্যবহারের সময় এটি নিয়মিতভাবে মনিটর করতে হয়। মডেল পুরানো হতে পারে, ডেটার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হতে পারে। তাই এটি নিশ্চিত করতে হয় যে মডেল এখনও সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। প্রয়োজনে নতুন ডেটা দিয়ে মডেলকে পুনরায় প্রশিক্ষিত করতে হয়।
সংক্ষেপে
ডেটা সায়েন্সের প্রাথমিক ধাপসমূহ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা একটি প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে নির্ভুল এবং কার্যকরী ডেটা সায়েন্স প্রজেক্ট তৈরি করা সম্ভব হয়।
Read more